বরিশাল নগরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চাপায় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় সড়ক অবরোধ করেছেন সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে দুপুর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকায় বরিশাল শহর এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল শহরের বিএম কলেজের সামনের প্রথম গেট–সংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত স্কুলছাত্রীর নাম জান্নাতুল মাওয়া (১০)। সে পটুয়াখালী সদর উপজেলার মো. নিজাম উদ্দিনের মেয়ে। সে পরিবারের সঙ্গে বিএম কলেজ রোড এলাকার এক স্বজনের বাসায় বেড়াতে এসেছিল। নিজ উপজেলায় একটি মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল শিশুটি।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জান্নাতুল ও তার আত্মীয় আরেক শিশু বিএম কলেজের সামনের প্রথম গেট–সংলগ্ন সড়কের এক দোকান থেকে চিপস কিনে রাস্তা পার হচ্ছিল। এ সময় দ্রুতগতির একটি ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জান্নাতুলকে চাপা দেয়। স্থানীয় লোকজন গুরুতর অবস্থায় জান্নাতুলকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বেলা দেড়টার দিকে বিএম কলেজের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তাঁরা নতুন বাজার মোড় থেকে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে পুরো বরিশাল শহরের মধ্যে যানজট তৈরি হয়।
পরে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে গিয়ে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। মহাসড়কের ওপর বেশ কয়েকটি টায়ারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ওই মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা কলেজের সামনে এ ধরনের মৃত্যু প্রতিরোধে প্রশাসনের কাছে চারটি দাবি রাখছেন। দাবিগুলো হলো নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ, সড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, সড়ক বিভাজক (ডিভাইডার) তৈরি এবং ফুটপাতের অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিএম কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘একই সড়কে বিএম কলেজ ছাড়াও এখানে অশ্বিনীকুমার শিশু নিকেতন, কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শেরেবাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে। এর সামনের সড়কে যদি যান চলাচলে কোনো নিয়ম না থাকে, সড়ক নিরাপদ রাখার উপায়গুলো না থাকে, সেটি খুব দুঃখজনক। আমরা সরকারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বলব, আর কোনো শিশুর প্রাণ না যাক। আর কোনো মায়ের কোল খালি না হোক।’ বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমাদের এই বিক্ষোভ।’
এদিকে অবরোধের কারণে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে হাজারো যানবাহন আটকা পড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। রাত পৌনে আটটার দিকে বরিশাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বেল্লাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুফল চন্দ্র গোলদারসহ অন্য কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সেখানে আসেন। এ সময় দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত চালককে খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেয় পুলিশ। বাকি দাবিগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয় প্রশাসন। প্রশাসনের আশ্বাসের পর রাত ৯টার পর অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইজিবাইকটি জব্দ করেছে। ঘটনার পর চালক পলাতক রয়েছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। দায়ী চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।