আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১১ জানুয়ারি ৩০ কনটেইনার চিনির একটি চালান আমদানি করে। প্রয়োজনীয় আমদানি দলিল হাতে পাওয়ার পর চালানটি খালাসের প্রক্রিয়া শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য প্রথমে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য ১৪ জানুয়ারি আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়। একই দিনে পণ্যের নমুনা উত্তোলন করা হয়। পরদিন নমুনা জমা দেওয়া হয় বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রামের কার্যালয়ে। এই নমুনা পরীক্ষার সনদ বা ছাড়পত্র মিলবে আগামীকাল বুধবার। অর্থাৎ নমুনা উত্তোলন থেকে ছাড়পত্র পাওয়া পর্যন্ত ৯ দিন বাড়তি সময় লাগছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে চার দিন পর্যন্ত বিনা ভাড়ায় পণ্য রাখা যায়। পঞ্চম দিন থেকে ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারের জন্য ছয় ডলার করে মাশুল দিতে হয়। তাতে সব মিলিয়ে আকিজের এই চালানে ১ হাজার ৪৪০ ডলার বা ১ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা বাড়তি মাশুল গুনতে হবে। এর বাইরে শিপিং কোম্পানিও কনটেইনার অতিরিক্ত সময় রাখার জন্য বাড়তি ভাড়া নেবে।
আমদানিকারকের পক্ষে চালানটি খালাসে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান রিভার সাইড সিঅ্যান্ডএফ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুন নবী প্রথম আলোকে বলেন, আগে সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স কিংবা আমদানি পণ্যের নমুনা উত্তোলনের পর অঙ্গীকারনামা দিয়ে পণ্য খালাস করা যেত। এখন নতুন নিয়মে পরীক্ষার ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত পণ্যের শুল্কায়ন হচ্ছে না। এতে প্রতিটি চালানেই বাড়তি মাশুল গুনতে হচ্ছে।
নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি বিএসটিআইয়ের ওপর নির্ভর করে। বিএসটিআই যত দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দিতে পারবে, তত দ্রুত পণ্যের শুল্কায়ন হবে।
-সাইদুল ইসলাম, উপকমিশনার, চট্টগ্রাম কাস্টমস
আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, ১৭৫ ক্যাটাগরির পণ্য খালাসের আগে বিএসটিআইয়ের ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগে বিএসটিআই পরীক্ষার জন্য নমুনা উত্তোলনের পর সাময়িক শুল্কায়ন করে আমদানিকারকদের পণ্য খালাসের সুযোগ দিত কাস্টমস। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত শুল্কায়ন হতো। এরপরই আমদানি পণ্যও ব্যবহারের সুযোগ মিলত। তাতে ব্যবসায়ীদের জরিমানা গুনতে হতো না।
১ জানুয়ারি থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন নিয়ম চালু করে। সে অনুযায়ী পণ্য শুল্কায়নের সফটওয়্যারে ১৭৫ ক্যাটাগরির পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মানে হলো, অনলাইনে নমুনা পরীক্ষার সনদ বা ছাড়পত্র জমা না দিলে পণ্য শুল্কায়ন করার সুযোগ নেই কাস্টমস কর্মকর্তাদের। বলা হচ্ছে, অনলাইনে আবেদন ও সনদ জমা দেওয়ার উদ্যোগটি ভালো হলেও নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে সময় লাগায় ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে আমদানিকারকদের।
শুধু আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নয়, অন্য যারাই ১৭৫ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানি করবে, তাদের সবাইকে বাড়তি মাশুল গুনতে হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে গুঁড়া দুধ, পরিশোধিত সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, ত্বক পরিচর্যার সামগ্রী ইত্যাদি। নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর অনেক পণ্যের আমদানি চালান আটকা পড়েছে বন্দরে। তবে ঠিক কত চালান আটকা পড়েছে, তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানাতে পারেনি কাস্টমস।
আকিজ ফুডের মতো মেঘনা নুডলস অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরিরও একটি চালান বন্দরে আটকা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ভেজিটেবল ফ্যাটের একটি চালান নিয়ে আসে ১২ জানুয়ারি। বিএসটিআইর পরীক্ষার জন্য চালানের নমুনা তোলা হয় ১৩ জানুয়ারি। নমুনা জমা নেওয়া হয় পরদিন। এই চালান পরীক্ষার সনদও পাওয়া যাবে আগামীকাল বুধবার। তাতে সব মিলিয়ে পণ্য খালাসে তাদের সময় লাগবে ১০ দিন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি বিএসটিআইয়ের ওপর নির্ভর করে। বিএসটিআই যত দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দিতে পারবে, তত দ্রুত পণ্যের শুল্কায়ন হবে।
এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রামের প্রধান গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত নমুনা পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দিতে ছয় কার্যদিবস লাগে। নতুন নিয়মে এখন যেহেতু ছাড়পত্র ছাড়া পণ্য খালাস সম্ভব নয়, সে জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।