চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। হালনাগাদ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে দেশটির প্রবৃদ্ধি নিয়ে নতুন এই পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
আইএমএফে বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ; ৩ মাস আগে দেওয়া তাদের আগের পূর্বাভাসে ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ। সেই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৪ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে তারা।
ঠিক কী কারণে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করা হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেনি আইএমএফ। তবে দ্য ডনের সংবাদে বলা হয়েছে, তুলার উৎপাদন কমে যাওয়া এবং শিল্পোৎপাদনের গতি কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছে। ২০২৩ সালে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ৩৮ শতাংশে উঠে গিয়েছিল। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশ। পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সালে দেশটিতে খাদ্য, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে রান্নার গ্যাস—হু হু করে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম। সেই প্রতিবেদনে অনুযায়ী, এক বছরে পাকিস্তানের শহরাঞ্চলে টমেটোর দাম ১৮৮ শতাংশ, পেঁয়াজের দাম ৮৪ শতাংশ, সবজির দাম ৫৫ শতাংশ, মসলার দাম ৪৯ শতাংশ, চিনির দাম ৩৭ শতাংশ ও আলুর দাম ৩৬ শতাংশ বেড়েছিল। গ্যাসের দাম বেড়েছিল ৩১৯ শতাংশ। বিদ্যুতের দাম ৭৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে অনেকটা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে পাকিস্তান ঋণের বোঝায় ডুবে গিয়েছে। সরকারি আয়ের ৬০ শতাংশ ঋণের সুদ পরিশোধে চলে যাচ্ছে। চলতি বছরসহ আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ৭০ বিলিয়ন বা ৭ হাজার কোটি ডলার বিদেশি ঋণ শোধ করতে হবে, যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে আছে মাত্র ১১ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার।
এ অবস্থায় বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, দেশটির উচিত হবে ঋণখেলাপি ঘোষণা দিয়ে অর্থনীতি পুনর্গঠন করা। ঠিক যেমন শ্রীলঙ্কা করেছে। কেউ কেউ আবার দেশটিকে আইএমএফের তিন বছরের কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি মেনে চলতে বলছেন। তবে যে পদ্ধতিই তারা গ্রহণ করুক না কেন, এতে মানুষের কষ্ট বাড়বে, কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান দেবে না।
গত কয়েক বছরে পাকিস্তান কয়েক বার আইএমএফের ঋণ নিয়েছে। ৭ বিলিয়ন বা ৭০০ কোটি ডলারের আরও একটি ঋণ কর্মসূচি নিয়ে তাদের সঙ্গে দেশটির আলোচনা চলছে। আইএমএফ কর্মসূচি প্রথম বছরেই কর-জিডিপি অনুপাত ২ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান এর আগে কখনো এক বছরে এ ধরনের বড় পরিবর্তন আনতে পারেনি। এবার সেটা হলেও মানুষ অনেকটাই চাপে পড়বে।
দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কা অবশ্য অর্থনৈতিক সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠার পথে। মূল্যস্ফীতি হ্রাস করা থেকে শুরু করে আরও মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল করা—সবই কমবেশি তারা করতে পেরেছে। পাকিস্তানে অবশ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে। অন্যান্য সূচকে বিশেষ উন্নতি হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা পাকিস্তানকে আয়কর আদায়ের পরিসর বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। এই সংস্কার চলাকালে, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় ঋণদাতাদের পাকিস্তানকে শুধু পুরোনো ঋণ নবায়নের সুযোগ দিলেই হবে না, পাশাপাশি দেশটিকে নতুন ঋণ দিতে হবে। এ ধরনের অর্থনৈতিক তারল্য বাড়ানোর উদ্যোগ দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে।